Emdadul Mia

সিলেটের ভোলাগন্জে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে আসছে অবৈধ পণ্য, সরকার হারাচ্চে রাজস্ব, নেপথ্যে কারা?

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিরা। নিত্য নতুন কৌশল অবলম্ভন করে এ সব পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে এসে জেলা শহর থেকে শুরু করে ছোট ছোট হাট বাজারে তা বিক্রি করছে। বর্তমান চোরাকারবারিরা স্থানীয় প্রশাসন ও বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এবং এজেন্টকে সাথে নিয়ে এ সব মালামাল পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে স্থানীয় বাজারকে সামনে রেখে তেল,স্বর্ণ, মাছ, এলুমিনিয়াম, শাড়ি, চিনি, মসলা, ভারতীয় মদক, কসমেটিক দ্রব্য সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা বলছে, এতে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হলেও দেশীয় পণ্য হুমকির মুখে পড়ছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এই চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত মাসুদ ননগার টিভিকে বলেন, ‘বাজারে ভারতীয় পণ্যের কারণে দেমীয় পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানে বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় রেখে বিক্রি করছে। নিরুপায় হয়ে ভারতীয় পণ্যই কিনতে হয়।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে  সম্প্রতি ভোলাগন্জ এলাকা থেকে পাচারের সময় একটি পিকআপ ভ্যান ও দুটি খোলা পিকআপে ভারত পণ্য আটক করে থানা-পুলিশ। এরপরও বন্ধ হয়নি এ চোরাকারবার। চতুর চোরাকারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন পাচার কার্যক্রম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে  ভারতীয় অবৈধ পণ্য পাচারের  নিরাপদ সড়ক হচ্ছে দূর্গাপুর-পূর্বধলা -কলমাকান্দা- সুনামগঞ্জের, ভোলাগন্জ  মহাসড়ক। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়ক পথে তেল,স্বর্ণ, মাছ, এলুমিনিয়াম, শাড়ি, চিনি, মসলা, ভারতীয় মদক, কসমেটিক দ্রব্য সুনামগঞ্জ সড়ক পথ ধরে  বিভিন্ন উপজেলা এবং পাশ্ববর্তী জেলা সদরে প্রবেশ করছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

জানা যায়, কোম্পানি গন্জের উত্তর সীমান্তে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে কৌশলে প্রতিদিন কোটি টাকার মালামাল অবৈধ পথে দেশে ঢুকছে। আর এসবের নেতৃত্বে রয়েছে সীমান্তের শক্তিশালী একাধিক চক্র। সীমান্তরক্ষিদের সাথে গোপন আঁতাত করেই সিন্ডিকেটরা দীর্ঘদিন ধরে এই পথে চোরাচালান ব্যবসা করে আসছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে চোরাকারবারিদের জন্য সব চেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ইউনিয়নের কুলাউড়া এলাকা। ওই এলাকার সীমান্তের ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ পর্যন্ত পিলারে নেই কোন কাঁটাতারের বেড়া। যে কারণে এই পথ চোরাকারবারিরা নিরাপদের জন্য বেছে নিয়েছে। এ চোরাইপথে প্রতি রাতে দেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে তেল,স্বর্ণ, মাছ, এলুমিনিয়াম, শাড়ি, চিনি, মসলা, ভারতীয় মদক, কসমেটিক দ্রব্য

এছাড়া মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, অস্ত্র, মোটর সাইকেল, শাড়ী কাপড়, নাসির বিড়ি, কসমেটিক্স, রান্নার মসলা, সাবানসহ চোরাই পথে প্রত্যেহ প্রবেশ করছে ভারতীয় চিনি, পেঁয়াজসহ নানা পণ্য।

এ রুট ছাড়াও ইউনিয়নের শিমুলতলা, মৌলাপাড়, বাঁশতলা, ঝুমগাঁও, পেকপাড়া, বোগলা ইউনিয়নের বাগানবাড়ি, গাছুগড়া ও ইদু কোনা, লক্ষিপুরের ভাঙ্গাপাড়া, মাঠগাঁও, নরসিংপুরের শ্যামেরগাঁও, ত্রিপুরা, চারগাঁও ও সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাতে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার সিন্ডিকেটের প্রতিটি সদস্যদের বাড়ি-ঘরে যেন একেকটা ভারতীয় অবৈধ মালামালের মিনি হাট-বাজার!

আর চোরাকারবারিরা তাদের আমদানী কারক হিসেবে ব্যবহার করছে এক শ্রেণির উঠতি বয়সী মাদকাশক্ত যুবক, শিশু ও চা-শ্রমিকসহ বিপুল সংখ্যাক নারীকে। যার ফলে অধিকাংশ সময়ই আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজেই অবৈধ মালামাল নিয়ে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে।

আর এসব অপরাধের পেছনে সক্রীয় সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতীক দলের গুটি কয়েক নেতার নাম, আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ওই সকল ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই এসব মালামাল আমদানী ও পাচার করা হচ্ছে বলে দাবী সাধারণ মানুষের। আর এর বিনিময়ে তারাও পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ।

এদিকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে কীভাবে দেশে অবৈধ পণ্য ঢুকছে– পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ওই অঞ্চলের কিছু ব্যবসায়ী। সম্প্রতি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা এ   বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিতে দেখা গেছে, এ ধরনের চোরাকারবারির সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। এবং তাদের শেল্টার দাতা হলেন- আওয়ামীলীগ নেতা স্থানীয় চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ এবং এমপি ইমরান আহমেদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এর একদিন পরেই কোম্পানি গন্জে ট্রাক ভর্তি বিপুল পরিমান ভারতীয় পণ্য সহ ২ চোরা কারবারিকে আটক করেছে  পুলিশ। আটক কৃতরা হলো সুনামগন্জের ধরাধরপুর গ্রামের  মোঃ আঙ্গুর মিয়ার পুত্র  ফজলু মিয়া (২৬) ও সুনাম গঞ্জ সদর থানার ওয়েজখালি গ্রামের  বাচ্চু মিয়ার পুত্র মোঃ মামুন মিয়া(৩৫) । কিন্তু পুলিশ তাদেরকে কোন এক অদৃশ্য কারণে গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় জনগনের সাথে কথা বলে জানা যায় , এর সাথে জড়িত আছে রাজনৈতিক উপরের মহল। জনগন ইঙ্গিত করছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদের দিকে। তার হস্তক্ষেপ ছাড়া এত বড় চোরাকারবারি করার দুঃসাহস আর কারো নেই। সেই সাথে ইমরাম আহমেদের ডানহাত হিসেবে কাজ করছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ । কিভাবে চোরাকারবারি থেকে মুক্তি পাবে সিলেট?।

যেখানে সরকারি ক্ষমতাসীন লোকের হাতে জিম্মি সাধারন মানুষের ব্যবসা কারবার। অতএব সাধারন ব্যবসায়ীদেরকে বাঁচাতে হলে এসব চোরকারবারি ও অবৈধ পণ্য পাচারকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এসব দূর্নীতিবাজ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক-দোয়ারার সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক জানান, চোরাচালানের বিরুদ্ধে তাদের নীতি জিরো টলারেন্স। চোরাচালানের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ চোরা কারবারিদের সাথে এক প্রকার সমঝোতা করছে এমটিই দেখা যাচ্চে।