Emdadul Mia

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের চিত্র কী?

সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম হলেও এই বছর হয়েছে ১৩তম।

আর বিশ্বের কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আগের বছর বাংলাদেশ ১৪৮তম দেশ হলেও এই বছর হয়েছে ১৪৭।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি বলছে, তালিকার অবস্থানে পরিবর্তন হলেও আসলে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ বাংলাদেশের স্কোরের কোন পরিবর্তন হয়নি। অন্য দেশের ভালোখারাপ করার কারণে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।

তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ দক্ষিণ সুদান।

এরপরেই রয়েছে সিরিয়া, সোমালিয়া ভেনেজুয়েলা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নীচে রয়েছে শুধুমাত্র আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের মতো একই অবস্থানে রয়েছে মাদাগাস্কার মোজাম্বিক।

অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড নিউজিল্যান্ড।

করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্সবাদুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআিই)’ বাংলাদেশের স্কোর ২৬। গত চার বছর ধরে দুর্নীতির এই সূচকে দেশটি একই অবস্থানে রয়েছে।

মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক . ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ”গত কয়েক বছর যাবৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারসহ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী নানা ঘোষণা সত্ত্বেও এক দশকজুড়ে এই নিম্ন স্কোর অবস্থান প্রমাণ করছে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হচ্ছে না। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের অবক্ষয়, রাজনীতির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনীতির সঙ্গে দুর্নীতি অপরাধের যোগের কারণে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ”তালিকার দিক থেকে হিসাব করলে বাংলাদেশের একধাপ উন্নতি হয়েছে মনে হলেও, দেশের দুর্নীতির আসলে কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ গত চারবছর ধরে বাংলাদেশে দুর্নীতির ক্ষেত্রে একই স্কোর রয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের পারফর্মেন্সের কারণে নয়, অন্য দেশের ভালো খারাপ করার কারণে অবস্থানের এক ধাপ উন্নতি হয়েছে

বিশ্বে কোন দেশে কতটা দুর্নীতি হয়, সেটি যাচাই করতে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত নম্বর দেয়া হয়। সেই নম্বরের ভিত্তিতে ওই দেশের দুর্নীতির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

২০২১ সালে বাংলাদেশের সিপিআই নম্বর ২৬। এর আগের চার বছর ধরে বাংলাদেশ একই নম্বর পেয়ে আসছে। তবে সর্বনিম্ন নম্বর প্রাপ্তির তালিকায় ২০২০ সালের তুলনায় বাংলাদেশের একধাপ উন্নতি হয়েছে।

দেশগুলোর রাজনীতি প্রশাসনে বিরাজমান দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষক বিশ্লেষকদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে স্কোর দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠানের দুই বছর ধরে সর্বনিম্ন তিনটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতির অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।

টিআইবি বলছে, দুর্নীতির দিক থেকে বাংলাদেশের স্কোর অবস্থান ২০১২ সালে যা ছিল, ১০ বছর পরেও একই রয়েছে। ২০১২ সালেও বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ১৩ তম হয়েছিল।

গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্কোর ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে রয়েছে। যে দেশের স্কোর যত কম, সেই দেশ তত বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। বিশ্বের সবগুলো দেশের স্কোরের গড় ৪৩। বাংলাদেশের স্কোর তার থেকে অনেক কম।

এর মধ্যে টানা চার বছরসহ ছয় বছর বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২৬, দুইবার ২৫ এবং একবার করে ২৭ ২৮।

সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ চারবার ১৩তম, দুইবার ১৪তম, একবার করে ১২,১৫,১৬ ১৭তম হয়েছে।

এই শতকের শুরুর দশকে অবশ্য বাংলাদেশ টানা তিনবার বিশ্বের সবচাইতে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছিল।