“ একটি কুসংস্কার ভাঙ্গা একটি পরমানু ভাঙ্গার চেয়ে ও কঠিন ”
কুসংস্কার কি ? আবার সংস্কারই বা কি ?
এক কথায় বলতে গেলে,যে ঘটনার মধ্যে যুক্তি বা বিজ্ঞানের চেয়ে প্রথাটাই বড় তাকেই সংস্কার বলে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের বা রাষ্ট্রের বা কোন সম্প্রদায়ের বা অঞ্চলের প্রচলিত প্রথা হোল সংস্কার। তা কখনো ব্যক্তি নির্ভর হতে পারে। ঐ পালিত বা মানিত সংস্কার গুলোর মধ্যে যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ব্যক্তি বা সমাজের ক্ষতি করে তা ই কুসংস্কার।
ইলেক্ট্রিক ইস্ত্রি গরম করার আগে সুইচ অন করা বা খাওয়ার আগে হাত ধোওয়া কোন সংস্কার নয়। এগুলোর মধ্যে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে। আবার মৃতদেহ দাহ করা বা কবর দেওয়া কে আমরা সংস্কার বলি। কিন্তু এসবের ও যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে।
কোন ক্রীকেটার ব্যাট করতে যাওয়ার আগে বাম পায়ের জুতো আগে পরেন। এটা তাঁর সংস্কার। এর জন্য তিনি যে প্রতি ম্যাচে সেঞ্চুরী করেন তা ও নয়। তবু এটা তাঁর সংস্কার যা সমাজের কোন ক্ষতি করেনা। আবার কোন ব্যক্তি অফিস যাওয়ার আগে তাঁর ছেলেকে আদর করেন,এটাও তাঁর সংস্কার। যখন তাঁর তিন ছেলের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন ছেলেকে আদর করেন। ওটা কুসংস্কার। এতে পরিবারে অশান্তি আসতে পারে।
আবার কোন শুভ কাজে যাওয়ার সময় পাকা কলা না দেখা,পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ডিম না খাওয়া এগুলো হোল ব্যক্তিগত সংস্কার। কিন্তু কোথাও যাওয়ার আগে ভিখারীর মুখ না দেখতে চাওয়া কুসংস্কার। বাড়ি থেকে বেরনোর জন্য পঞ্জিকা দেখা একটি সংস্কার , কিন্তু এটা বাড়ির অন্যজনকে মানতে বাধ্য করানো কুসংস্কার। কারন পঞ্জিকার ঐ নির্দেশের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। আবার কেউ কেউ সকালবেলা গ্রামের নির্দিষ্ট মানুষের মুখ দেখতে চায়না। বলে হওয়া কাজ হবেনা। এটা শুধু কুসংস্কার নয়, নোংরামীও।
মুহরমের সুদৃশ্য তাজীয়া নিয়ে গ্রামের মুসলিম ভাইয়েরা যখন যায় তখন গমনপথে দেখা সমস্ত গিরগিটিকে তারা পিটিয়ে হত্যা করে। এটি নাকি তাদের ধর্ম নির্দেশিত। আমার এক ক্লাস টেন এর মুসলিম ছাত্রকে এক সময় বলেছিলাম যে তারা এটা করে কেন? ও বলেছিল বাড়ির বড়রা তাই করতে বলে যে। ওকে আমি বুঝিয়েছিলাম। জানিনা তার ফল কি হয়েছে। এটা তীব্র কুসংস্কার।
হিন্দু বিবাহিতা মহিলারা শাঁখা সিঁদুর পরেন,মুসলিম মহিলারা বোরখা পরেন,আবার মুসলিম মহিলারা বিবাহিতাঈ হলে নামের শেষে বিবি এবং বিধবা হলে বেওয়া। হিন্দু বিধবারা অনেক ক্ষেত্রে শাদা শাড়ি। সবগুলোই কুসংস্কার। মহিলাদেরকে সমানাধিকার না দেওয়ার পুরুষ আইন। মঙ্গল এই ,হিন্দু সমাজ এ থেকে মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু মুসলিম ধর্ম যেহেতু একটি রাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নয় সেহেতু ওদের আধুনিক হওয়া কঠিন।
পৃথিবীর সব ধর্মই কম বেশী কুসংস্কারগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশী ছিল হিন্দু ধর্মে। সতীদাহ প্রথা,বাল্য ও বহু বিবাহ। তীব্র বর্ণভেদ ,নিম্নচ বর্ণের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার ছাড়াও অসম্ভব রকম সামাজিক অন্যায়ের প্রতিভু ছিল এই ধর্ম। যুগে যুগে ধর্মগুরুরা এই ধর্মের ওপর খবরদারী চালিয়েছে। বহু নিম্ন বর্ণের হিন্দু বাঁচার জন্য অন্য ধর্মে রূপান্তরীত হয়েছে।
আজ যখন দেখি শিব চতুর্দশীতে ব্রত করা বা শিবলিঙ্গে দুধ ঢালাকে এরা নিজেদের জীবন হিসাবে দেখে তখন মনে মনে বলি আরে মেয়েরা,পুরুষ লিঙ্গ কি? গাধারা বোঝেনা। তবে বুঝতে এদের হবে। হিন্দু কোন নির্দিষ্ট ধর্ম নয় বলে যুগে যুগে নানা ধর্মগুরু যেমন এদের ওপর খবরদারী চালিয়েছে তেমনি অনেক ধর্ম সংস্কারক নিয়মাবলীর পরিবর্তন করেছেন।
কিন্তু এ দেশের মুসলিম ধর্মের অন্ধতার মুক্তি হওয়া কঠিন। ওদের ধর্মীয় কুসংস্কারগুলো সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্ম নির্দেশিত। সমগ্র মুসলিম সমাজ নিজেদের না বদলাতে পারলে কোন এক রাষ্ট্রের মুসলিমরা তা পারবে না।
সবারই বোঝা উচিৎ, সর্ব ক্ষেত্রে আমাদের
যুক্তি চাই, বিজ্ঞান চাই, অন্ধতা চাইনা!!!!